"না কমলা না মেহেরজান" কে আমি ব্যক্তিগত দিক থেকে যেভাবে দেখি || Ankon Dey Animesh || Nurul Alam Atique || Joya Ahsan || Ahmed Rubel
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "মুসলমানির গল্প" অবলম্বনে নির্মিত নাটক "না কমলা, না মেহেরজান" বেশ কিছু কারণে আমার মনে অনেক দিন বিরাজ করবে। পরিচালক নুরুল আলম আতিক গল্পের প্রেক্ষাপট সময়েই নাটকটির টাইমলাইন বানিয়েছেন। সম্ভবত এই গল্প নিয়ে কাজটা করতে তিনি স্পেসিফিক্যালি উৎসুক ছিলেন, সেসব নিয়ে আলাপ একটু পরেই দিচ্ছি!
Written and Edited by: Ankon Dey Animesh
এই কাজটাকে আমি আর কিছুর জন্য মনে না রাখলেও এর মিউজিক টিমের জন্য মনে রাখব। বা পুরো মিউজিক কম্পোজিশন বাদ দিলেও শেষের "প্রেম নগর কা অন্ত না পায়া" এর জন্য মনে রাখব। কবির সাধুর এই কবিতাকে শুরুতে সাহানা দত্তগুপ্তার নিকট শুনেছিলাম আমি। তিনি কবিরের বেশ কিছু কবিতাকে ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যালের ১০টি ঠাটে ফেলে এলবাম বের করছিলেন, এবং এই কবিতাকে সম্ভবত ইমন রাগেই তৈরী করেছিল তারা। কিন্তু "না কমলা, না মেহেরজানে" ভৈরব বা ভৈরবীতেই (বা তৌড়ী) তৈরি করা হয়েছিল বলে মনে হয়। তবে যেই ঠাটেই করুক নাহ কেন, আমার অসাধারণ লেগেছে। পুরো কাজের শেষে যখন এই কম্পোজিশন আমার কানে আসলো, আমি বিভোর হয়ে গেলাম এক অন্যরকম স্বপ্নে! শেষের দিকের এই কম্পোজিশন পুরো কাজটাকে মনে রাখতে বাধ্য করে। অনেক চেষ্টা করেও মিউজিক ডিরেক্টরের নাম পেলাম নাহ। আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে ইমতিয়াজ বর্ষণ এর নাম পেলাম। জানি নাহ উনি করেছিল নাকি পরিচালক বা সহ-পরিচালক নিজেই করেছিলেন মিউজিক ডিরেকশন। এই কাজের সাউন্ড ডিজাইন, মিউসিক কম্পোজিশন, ইন্ট্রো টিউন থেকে শুরু করে সব কিছু আমার কাছে পিচ পারফেক্ট লেগেছে।
আর্ট ডিরেক্টর ইমতিয়াজ বর্ষণ এর প্রশংসা করতেই হয়। সেট এর ডিজাইন, সেট এলিমেন্ট, টাইম ব্যাকড্রপ ভালো ছিল। যদিও সেই সময়ের বিয়ের (ব্রিটিশ শাসন) ব্যান্ড পার্টির ইন্সট্রুমেন্ট এবং পোশাক-সজ্জা কেনো হুবহু এখনের ব্যান্ড পার্টির মত আমি জানি নাহ। (কেন জানি মনে হচ্ছে পর্তুগিজ কলোনির সাথে এর সম্পর্ক আছে, বিষদ জানি নাহ, ঘেটে দেখা লাগবে।) এর সাথে লাইটিং এর কিছু কাজ, যেখানে করার স্কোপ ছিল আর কি, সেখানে অসাধারণ হয়েছে। একটা সিন ছিল এরকম যেখানে কাকী রাজরানী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে তার কমলাকে দিয়ে পা টিপিয়ে নিচ্ছেন। সেই সিনে অসাধারণ ফ্রেমিং তৈরি করা হয়েছিল!
Written and Edited by: Ankon Dey Animesh
ব্যাকড্রপে যেতে লাঠিয়াল বাহিনী বা ডাকাত বাহিনী বা পালোয়ানদের দাপুটে ভূমিকা ছিল। লাঠিয়াল বাহিনীর লাঠি নিয়ে প্রিপারেশন, পালোয়ানদের একজনকে কাঁধের উপর তুলে স্কোয়াট দেওয়া, বা ডাকাত বাহিনী সর্দারের অভিনয়- সব কিছু এক অন্য মাত্রা তৈরী করেছিল। এই অংশগুলোর ডিটেইলিং এ যেই টিম নিয়োজিত ছিল, তাদের জন্য থাকবে আমার ভালোবাসা।
এর গল্পের কথা যদি বলি, তাহলে যারা মুসলমানির গল্প পড়েছেন তারা তো প্লটটা অল্প করে জানেনই। তবে পরিচালকের অন্যান্য কাজেও আমি লক্ষ করেছি যে সব কিছু শেষ হওয়া মানেও যে শেষ হওয়া নয়, এই ধারণা বা বিশ্বাসটাকে উনি খুব তুলে আনতে চান। ইভেন ডুব সাঁতার ফিল্মে শেষে "দি এন্ড" লেখা আসার পরে আবার আসলো "নো এন্ড", এবং এরপর তিনি দেখালেন কীভাবে আবার জীবনকে রিবাউন্ড করে নিয়ে এগিয়ে চলছে মেয়েটি। এভাবে "না কমলা, না মেহেরজান" এও কমলা হিসেবে তার আইডেন্টিটি চলে গেলো, সমাজের কেউ তাকে গ্রহণ করছে না, তার বাঁচার কোনো ইচ্ছা বাকি রইলো নাহ, জীবনের অর্থ তার কাছে ধূসর। এবং এরপরে তার আবার জীবনে ব্যাক করা। এর মাধ্যমে পরিচালকের বক্তব্য যে জীবনের অর্থ এখন ধূসর মনে হওয়ার অর্থ জীবনে আরো বেশ কিছু সময় বাকি রয়ে গেছে। বরং যখন জীবনের অর্থ ধূসর মনে হওয়া শুরু করবে তখন ই বুঝতে হবে যে নিজেকে জানার, নিজেকে চেনার, সবকিছুকে বোঝার এই তো সময়! কেবল এই অংশগুলোর জন্য ও এই কাজ আমার মাথায় থাকবে অনেকদিন।
Written and Edited by: Ankon Dey Animesh
জয়া আহসানের কথা কি ই বা বলব। আতিক ভাইয়া নিজেই জানতেন যে এই পুরো গল্পের ইমোশনাল বিল্ডাপ থেকে শুরু করে সব কিছু লিড এক্ট্রেস এর অভিনয়ের উপরেই যাবে এবং এই চরিত্রে আমার মনে হয় নাহ জয়া আহসান থেকে অন্য কেউ বেটার করতে পারত বলে। এই গল্পে দুঃখী কমলা, স্নেহময়ী বড়বোন, সদ্য বিবাহিতা, সর্বস্ব হারানো কমলা, পুনর্জীবন পাওয়া মেহেরজান, যোদ্ধা মেহেরজান, নেত্রী- এরকম হাজারো শেডে আমরা তাকে দেখি। এবং একটা কাজের মধ্যেই এতগুলো শেডে তিনি অদ্ভুত ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে দারুণ এক পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন। জয়া আহসানের অভিনয়শৈলী দেখার জন্য হলেও সবার এই কাজ দেখা উচিত। এই কাজের জন্য তিনি সম্ভবত ঘোড়া চালানো ও শিখেছেন! শিখেছেন লাঠিয়াল বাহিনীর কিছু বেসিক স্টেপ্স। যুদ্ধ প্রশিক্ষণরত অবস্থায় এবং বিপদ্গ্রস্থ কাকাকে উদ্ধারের সময় তাকে অনন্য মনে হয়েছে।
আহমেদ রুবেল একজন শক্তিশালী অভিনেতা, কিন্তু এই গল্পে তার নিজেকে মেলে ধরার অতটা জায়গা ছিল নাহ। তাকে যদি কাস্ট করতে হত, তাহলে আমি হয়ত করিমের চরিত্রে করতাম। করিমের চরিত্রে যে অভিনয় করেছে তার অভিনয় বা ডায়লগ ডেলিভারি আমার অতটা ভালো লাগেনি। রুবেল ভাইয়া হয়ত সেই জায়গায় দারুণ কিছু উপহার দিতে পারতেন। বাকি চরিত্র গুলোর মধ্যে হবির খাঁ এর চরিত্র, বা কাকীমার চরিত্রের অভিনয় আমার খুব ভালো লেগেছে। সাথে ছোট বোন চরিত্রে যে অভিনয় করলো, তার ডায়লগ ডেলিভারি ও আমার বেশ কিছু জায়গায় ভালো লাগেনি। তবে কিছু ইমোশনাল জায়গায় তার অভিনয় ভালো ছিল। ওভার অল এই কাজের একটিং টিমের পারফরম্যান্স মোটামুটি ভালোই বলা যায়।
Written and Edited by: Ankon Dey Animesh
এই কাজের ক্যামেরা ওয়ার্ক এবং এডিটও ভালো লেগেছে। স্ট্যাটিক লং শটস, বা ক্যারেক্টার মুভমেন্টের সাথে জাম্পকাট এডিটগুলো দেখতে সুন্দর লাগছিল। তবে টাইম লাইন অনুযায়ী কালার গ্রেডিং বা কালার কারেকশন আমার ভালো লাগেনি অত। অবশ্য নাটকে এমনটাই হয়। অত সময় নিয়ে কালার গ্রেডিং প্ল্যান করা হয় নাহ, আগের টেমপ্লেটের মতই বেশিরভাগের কালার গ্রেডিং থাকে। একইরকম গ্রেডিং মনে হয়। একটু ভিন্নরকম হলে বা টাইমলাইনের সাথে মিল থাকলে দেখতে আরো ভালো লাগত।
পরিশেষে বলতে চাই, "না কমলা, না মেহেরজান" একটি অসাধারণ কাজ। এর গান, অভিনয়, গল্প পুরো কাজটা দেখার পরে আপনার ভালো লাগবে। অনলাইনে সম্ভবত এভেইলেবল আছে, পেয়ে যাবেন অল্প ঘাটাঘাটি করলেই। অনুরোধ থাকবে দেখে নেওয়ার। ভালোবাসা পরিচালক নুরুল আলম আতিকের জন্য, ভালোবাসা জয়া আহসান, ইমতিয়াজ বর্ষণ, এবং সংশ্লিষ্ট টিমের জন্য!
Written and Edited by: Ankon Dey Animesh
Comments
Post a Comment