গেরিলা সমাচার (লেখক আরাফাত জুয়েল)
ফিল্মটি মূলত প্রবাহিত হতে থাকে বিলকিস বানু নামের একজন সংগ্রামী নারীর হাত ধরে, যার ভেতরে স্বামীকে খুঁজে পাবার আকাঙখার সাথে জড়িয়ে রয়েছে গেরিলা যোদ্ধা এবং আলতাফ মাহমুদের সাথে কাজ করে যাওয়া বলিষ্ঠ রূপ৷ খুব সম্ভবত পুরান ঢাকার একটি বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে তার বসবাস৷ শাশুড়ির দেখাশুনার পাশাপাশি চাকরি করেন একটি ব্যাংকে, এবং এসবের আড়ালে গেরিলা যুদ্ধের ভেতরকার নানা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে, পাশাপাশি গেরিলা নামের একটি পত্রিকা ছাপাতেও কাজ করে এই নারী৷ তবে বেশিদিন চালু রাখা যায়নি৷ স্বামীর পর হারায় শাশুড়িকে, ওদিকে আলতাফ মাহমুদও ধরা পড়ে যায়৷ আগষ্টের শেষের দিকে তাই তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়৷ সে অনেক দূরের গ্রাম, জলেশ্বরী নাম, ফিরে যাবে বিলকিস তার ভাইয়ের কাছে৷ কিন্তু তার জন্যে অপেক্ষা করে থাকে আরও অনেক ট্র্যাজেডি৷
গেরিলা বেশ অনেকগুলো পুরষ্কার অর্জন করেছে, বেশ সুনামও অর্জন করেছে আমাদের দেশীয় মুক্তিযুদ্ধের জনরার মুভি হিসেবে, তথাপি এই মুভি আমার মনে খুব একটা ভালো জায়গা দখল করতে পারেনি৷ হিস্টোরিকাল স্কেপটিসিজমের কথা একপাশে রেখে মুভির প্লট নিয়ে যদি বলি, প্লটের ফ্লো ঠিক স্পনটেনিয়াসলি যায়নি, কেমন যেন খাপছাড়া ভাব৷ কোথাও খুব তাড়াহুড়ো করে ফেলছিল, আবার কোথাও স্লো৷ মুভির ক্যারেক্টার বেশ অনেকগুলো থাকলেও বেশ কটি ক্যারেক্টারের টাইম ডিস্ট্রিবিউশন আমার ঠিক লাগেনি, যেমন বিলকিসের স্বামী হাসানের ক্যারেক্টারকে আরও কিছুটা সময় দেয়া উচিৎ ছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কটা আরও ভালো করে ফুটিয়ে তুলতে, কিংবা শ্যামল মাওলার কো - এক্টর যে কিনা বিলকিসের বন্ধু ছিল এবং হয়তো বিলকিসকে পছন্দ করতো তার ক্যারেক্টারটা আনার যৌক্তিকতা আমার মাথায় ঢুকেনি৷
তারপর আসা যাক শতাব্দী ওয়াদুদের দুটো রোল প্লে করা, একটিতে মেজর সরফরাজ, অপরটিতে ক্যাপ্টেন শামসেদ৷ মেজর সরফরাজের মৃত্যুর সিনটা ঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, যেন তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দেয়া হয়েছে মুভির একটি মূল ভিলেনকে৷ গ্রাফিক্সের ব্যাপারেও রয়েছে বেশ ভালো রকমের ল্যাকিংস, বিশেষত বোমা ফাটার সিনগুলো, রাতের গেরিলা এটাকগুলো বেশ একটু এনিমেটেডই মনে হচ্ছিল৷
এক্টিং এর দিক থেকে বেশি অভিযোগ না থাকলেও ছোট ছোট কিছু সমস্যা রয়েই গেছে, যেমন কবরের সামনে খোকনের কান্নার দৃশ্যটি মোটেও কোনো কান্নার মতো লাগেনি৷ তবে জয়া আহসানের অভিনয় বেশ দারুণ এবং প্রাঞ্জল লেগেছে, যেমনটি লেগেছে আহমেদ রুবেল এবং অন্যান্যদের৷
এই ফিল্মের আরও যে তিনটি বিষয় আমার ভালো লেগেছে তার একটি হচ্ছে এর গান, অপরটি কসটিউম এবং সিনিক শটগুলো৷ অসাধারণ কিছু টাইমিং খুব সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক গান এই মুভির অন্যতম আকর্ষণ৷ তাছাড়া বাঁশির টানটা সত্যিই বিমোহিত করে তুলে৷ কস্টিউম নিয়ে বেশ ভালো কাজ হয়েছে মুভিটিতে, বিশেষত জয়া আহসানের মেক আপটা আসলেই বেশ দারুণভাবে খাপ খেয়েছে তার এক্সপ্রেশনের সাথে৷ এবং রয়েছে অসাধারণ কিছু সিনিক বিউটির শট৷ জলেশ্বরী যাবার সময়কার রেললাইনের আশেপাশের দৃশ্য, কিংবা ছোটবেলায় খোকন - বিলকিসের নৌকা চালানো, সবই ছিল অত্যন্ত সুন্দর৷
সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গড়ে ওঠা ফিল্মোগ্রাফিতে গেরিলা আমার কাছে বেশ পিছিয়ে আছে বলেই মনে করি৷
Comments
Post a Comment