দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন || Debashmita Saha || Ankon Dey Animesh
রহস্য,এডভেঞ্চার আর ক্রিপ্টোলজি - এই সংক্রান্ত সিনেমা দর্শককে কেবল বিনোদনই দেয় না ; চিরাচরিত একঘেয়ে জীবনে ভাবনার ধরনেও যেন কিছুটা নতুনত্ব নিয়ে আসে। সেই রহস্যের সিনেমার গল্প নির্মাণ যদি হয় দুর্গাপূজার সত্যিকারের আবহকে পেছনে রেখে - তবে তা আর কাউকে না হোক; বাঙালিকে খুব টানে। রহস্যের সাথে বাঙালিয়ানার এই মেলবন্ধন পাওয়া যায় ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ সিনেমায়।
ফেলুদা,ব্যোমকেশের পর আবীর চট্টোপাধ্যায় এই ছবিতে সুবর্ণ সেন ওরফে সোনাদার চরিত্রে। ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে আবীরকে মানিয়েছে দারুণ! রহস্য সিনেমা বিভিন্ন আঙ্গিকেই নির্মাণ করা যেতে পারে, কিন্তু ইতিহাসকে পেছনে রেখে রহস্য বুননের দিকটা বেশ আকর্ষণীয়। সোনাদার এক ছাত্রের পৈতৃক বাড়ির ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে যায় সোনাদা। পুরনো জমিদারবাড়ির পুজোর আমেজের সাথে গুপ্তধনের প্রসঙ্গ নিয়ে আসে রহস্য। দুশো বছর আগের রত্নভাণ্ডার নিয়ে প্রচলিত কথন, সাথে রত্নভাণ্ডারের অস্তিত্ব নিয়ে ধোঁয়াশা, পারিবারিক বচসা - ধীরে ধীরে শুরু করে ঘটনার গাঁথুনি। সাথে পুজোর আমেজ। সোনাদার অভিযানের সঙ্গী আবির ও ঝিনুক। আবির ও ঝিনুক প্রেমিক-প্রেমিকা। রহস্যের টানটান উত্তেজনার সময়টায় ওদের রসায়ন দর্শকদের যেন কিছুটা দম ফেলার সুযোগ করে দেয়, হালকা করে দেয় পরিবেশটা।
রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং তা হলো - পুজোর চালচিত্র আর গানের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে প্রশ্নের উত্তর। আর এই সবকিছুর পেছনে জুড়ে থাকে ইতিহাস। সিরাজউদ্দৌল্লা, জগত শেঠের প্রসঙ্গ কাহিনিকে আরও ইন্টারেস্টিং করে তোলে। সিনেমার প্রথমদিকে দেখানো একটা ছুরিকে পুরো ব্যাপারটার সাথে আকস্মিকভাবে জড়িয়ে দেওয়ায় দর্শক কিছুটা চমকেও ওঠে। সাংকেতিক ধাঁধা,সূত্রের সমাধানের খোঁজ, পুজোর আমেজ, প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু মুখোশ উন্মোচন এবং সবশেষে মাটির তলায় দুশো বছরের পুরনো গুপ্তধনের সন্ধানপ্রাপ্তির মাধ্যমে উত্তেজনার অবসান - এভাবেই আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সিনেমার কাহিনি।
ঘুরোঘুরি, সেলফি তোলা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড - এসব বাদ দিয়ে দুর্গাপুজোর আসল সৌন্দর্য খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এই সিনেমায়। দুর্গাপুজোর স্নিগ্ধতা তো আসলে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা। এই ব্যাপারটা সিনেমায় উঠে এসেছে সুন্দরভাবে। কাশফুল, ভোরে কলাবউ স্নান করাতে যাওয়া, প্রতিমার চালচিত্র - এসব দৃশ্য যেকোনো বাঙালিকে আবেগপ্রবণ করে তোলে। আর এই সিনেমার উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে একাল আর সেকালের সমন্বয়। দেবরায় বংশের বড় ছেলে একদিকে পারিবারিক ঐতিহ্যে শ্রদ্ধাশীল, অন্যদিকে মেজছেলের কাছে আচার-সংস্কার সবই মূল্যহীন। আবার এদিক থেকে সোনাদার দলের সদস্যরা আধুনিক যুগের সেই তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করছে , যাদের কাছে দেবরায় পরিবারের ঐতিহ্য, আচার-অনুষ্ঠান সবই নতুন হলেও আকর্ষণীয় এবং কৌতূহল-উদ্দীপক।
সবকিছুর শেষে এটাই বলা যায়, একইসাথে রহস্য এবং নস্টালজিয়া - এই দুইয়ের মেলবন্ধনে তৈরি ”দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন” পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে দেখার মতো একটি সিনেমা।
Excellent writing arm
ReplyDeleteআমার দিদি সবসময়ই সেরা❤
ReplyDelete