রোদ মেখো সূর্যমুখী ।। দেবস্মিতা সাহা

 

“রোদ মেখো সূর্যমুখী” দেখার পর আপনি মাথায় একটা ভোঁতা যন্ত্রণা অনুভব করবেন।  আপনার মনে হবে আপনার চারপাশটা হলুদ হয়ে যাচ্ছে - আপনার হাতের বইটা হলুদ, কাল মধ্যরাতে গাওয়া গানটা হলুদ, এমনকি আকাশটাও হলুদ। এক পর্যায়ে আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন - “বেদনার রঙ হলুদ!” তখন আপনার মনে হতে পারে - আপনি বুঝি ফানুস! এটা ভেবে  যেই না আপনি ওড়ার চেষ্টা করতে যাবেন, তখনই বুঝতে পারবেন - আপনি ফানুস নন! আমার বা আপনার পক্ষে ফানুস হওয়া সম্ভব নয়!


যান্ত্রিকতার এই শহরে আমরা কমবেশি সবাই বিচ্ছিন্ন। “রোদ মেখো সূর্যমুখী” প্রচণ্ড রকমের বিচ্ছিন্ন একজন তরুণকে নিয়ে, যার নাম - ফানুস। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে পাশ করে সামনে থাকা উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের তোয়াক্কা না করে নিজের স্বাধীন সত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে ফুটপাতে পুরানো বইয়ের ব্যবসা শুরু করার মতো সাহসী, কিন্তু বোধহয় সেজন্যেই ভীষণ শূন্য আর নিঃসঙ্গ! এই নিঃসঙ্গতার এক বিকেলে হঠাৎ ফানুস তিতিরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু ফুটপাতের বইয়ের ব্যবসায়ীর গুলশানের সম্ভ্রান্ত বিবাহিত নারীর প্রেমে পড়তে নেই। কিন্তু ওই যে,”প্রেমে তো মানুষ ইচ্ছে করে পড়ে না ... প্রেম ঘটে যায়!” তবু শূন্যতা কাটানোর চেষ্টা করে ফানুস। কিন্তু ফানুসরা থিতু হতে পারে না,তাদের থিতু হতে দেওয়া হয় না!




অভিনয় নিয়ে যদি বলতে যাই, এই টেলিফিকশনটি দেখার সময় মনে হয় না, অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা অভিনয় করছেন। প্রতিটা সংলাপ খুব সাবলীলভাবে ডেলিভারি করা হয়েছে যা পুরো নাটকটি হৃদয়ঙ্গম করতে ভীষণ সাহায্য করেছে। এই নাটকে মিল্টন মোল্লাকে দেখে মনে হয়, ফানুসের চরিত্রে উনার থেকে ভালো আর কাউকে বোধহয় এই চরিত্রের জন্য মানাতো না। উনাকে দেখে মনে হয়েছে, উনি সত্যিই একজন ছন্নছাড়া শিল্পী। উনার কস্টিউম, মেকআপ ছিল চরিত্রের সাথে পুরোপুরি মানানসই। অপি করিমকে এই নাটকে “সুন্দরী” নয়, দেখানো হয়েছে “সুন্দর” হিসেবে! সজল, বন্যা মির্জা - তাদের নিজ নিজ চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন।


পুরো নাটকটিই চমৎকার, এর মধ্যে কিছু কিছু দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ। ফানুসের স্বপ্নে তিতিরকে প্রশ্ন করার দৃশ্য কিংবা নাটকের শেষে পিঠে শিশুটিকে নিয়ে হলুদ আলোয় হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য - এগুলো ছাড়াও আরও ছোটখাটো কিছু সিনারিও ছিল অনবদ্য।


“রোদ মেখো সূর্যমুখী” - নামটা শুনে আপনার মনে হতে পারে, সূর্যমুখীকে রোদ মাখতে বলার আসলেই কি কোনো প্রয়োজন আছে? টেলিফিকশনটি দেখুন, আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন!


"শহর বদলে গেছে,
ধুলোর রঙ কখন বদলায়!
উষ্ণতার হিসেব আমি জানি না
অবিরাম গলতে থাকা সোডিয়াম আলো - 
আমাকে বদলাতে দেয় না!
তবুও স্পর্শ পেলে আমি দিব্যি বদলে যেতাম!
মায়ের পরে আর কোনো নারীমুখ মনে পড়ে না
কপাল ফেটে জ্বর করে
তবু কোনো আঙুল রেখা করতল
 ছুঁয়ে যায় না আমার পুড়তে থাকা কপাল
আমার কণ্ঠ শুকিয়ে আসে - 
তবু জলের বদলে সেখানে গড়িয়ে পড়ে, নগরীর সব ক্ষয়ে যাওয়া ইট সুরকির দেয়াল
কেউ নেই,ভাল্লাগে না!"









Written and Edited by : Debashmita Saha

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

চতুর্থ মাত্রা ।। আরাফাত জুয়েল ।। দেবস্মিতা সাহা

The Curious Case of Benjamin Button ।। আরাফাত জুয়েল

ইন দা মিডল অফ "Nowhere" || আরাফাত জুয়েল