ডুব সাঁতার || জটিল সম্পর্ক, সহজ গল্প, অনবদ্য গান ও অভিনয় || Nurul Alam Atique || Ankon Dey Animesh

 



কিছু অপূর্ণ সম্পর্কের অপূর্ণ গল্প দেখতে চান ৯০ মিনিট ধরে? অথবা একটা শহরের মধ্যে একটা সংসারের হাসিকান্নার আড়ালে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে চান? সম্পর্ক পরিবর্তনের সাথে সাথে পারিপার্শ্বিকের পরিবর্তন, পরিবার-চিন্তন, এবং স্ব-পরিবর্তনের গল্পের শেষ অংশে বিষাদ অনুভূতি নিয়ে এন্টারটেইন্ড হতে চান? দেখতে চান যেকোন সময়ে আসা প্রেম এবং তার জন্য অন্য মানুষ পরিবর্তন হওয়ার আশায় স্বপ্ন বাঁধা? দেখে ফেলুন ডুব সাঁতার। 


Written and Edited By: 
Ankon Dey Animesh

ডুব সাঁতার এর গল্পটাই বা গল্প বলে যাওয়াটাই আসল ছিল, তাই তা নিয়ে কিছু বলব নাহ। সহজ সরল ভাবে একটি জটিল সম্পর্কের গল্প। অনুরোধ থাকবে দেখে নেওয়ার। পরিচালক নুরুল আলম আতিক স্ক্রিনপ্লে নিয়ে খেলেছেন দারুণভাবে। বর্তমানের সাথে ক্ষণে ক্ষণে অতীত এনে ইমোশনাল বিল্ডাপ করেছেন ভালোভাবে। ছিল মতিয়া বানুর লেখা যথাযথ সংলাপ যাকে অধিক রঞ্জিত বা অরঞ্জিত- কোনটাই মনে হয় নি। পরিবারের অনটনের মাঝে ছেলের না বোঝা, আবার মেয়ের সবটা বুঝে নেওয়া- সব যেন যথাযথভাবে সংলাপগুলোর মধ্য দিয়ে উঠে আসছিল। হাটে বারবার একই দাম জিজ্ঞেস করা জিনিস দেখার সময়ে, কমিয়ে রাখা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইকোনমিক ডিটেইলস ডায়লগগুলোতে ভালোভাবেই উঠে আসে। 


Written and Edited By: 
Ankon Dey Animesh

মিউজিক ডিপার্টমেন্ট এর কাজ বা কম্পোজিশনগুলো ভালো লেগেছে। জয়া আহসানের কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত হোক, কিংবা শেজাদ চৌধুরীর নিজের লিরিক্সে নিজের গানগুলো হোক- সব শুনতে ভালো লাগছিল, ভালো লাগছিল এই টিমের আবহ সঙ্গীতগুলো। তবে যদি মিউজিককে আমি সাউন্ড ডিপার্টমেন্টে ধরি, তাহলে সাউন্ড ডিজাইনার এর কিছু কাজ নিয়ে প্রশ্ন এসেই যায়। পুরো ফিল্ম জুড়ে অধিকাংশের ডিজাইনই যথাযথ ছিল, তবে কিছু অংশের নয়েজ কমানোর জন্য যেভাবে বারবার কাট করা হচ্ছিল, সেটা কানে লেগেছে। ওভাবে কাট না করে একটা ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ রেখে দিয়ে তার উপরই এমপ্লিফাই করা হয়ত যেত। সেটা ঢাকতে পিছনে উনি পাখির সাউন্ড ব্যবহার করার চেষ্টা করলেও তা কাজে লাগেনি। তবে পুরোটা বিবেচনা করলে বেশ ভালোই বলা যায়, কেবল কিছু স্পেসিফিক অংশ ছাড়া। 




তবে এই সিনেমার সব থেকে বেশি দাগকাটার মত অংশ এক্টর পারফরম্যান্স। জয়া আহসান তার চরিত্রে ছিলেন অনবদ্য, ভালোই মানিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে, গল্পের বিভিন্ন শেডে। কখনো পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করে মেয়ে, কখনো ডিভোর্সি মেয়ে, কখনো সদ্য প্রেমে পড়া অবস্থা, কখনো কষ্টে কাতর, কখনো বা উদ্বিগ্ন ভবিষ্যৎ চিন্তা, কখনো অফিশিয়াল কাজ বা সোশ্যাল ওয়ার্ক। এত্তগুলো ভিন্ন শেডে তিনি নিজেকে নিয়ে খেলেছেন, এবং অদ্ভুত অভিনয় উপহার দিয়েছেন। তার অভিনয় ব্যাতীত ইমোশনাল বিল্ডাপ সম্পূর্ণ হত নাহ। 



Written and Edited By: Ankon Dey Animesh

যদি শেজাদ চৌধুরীর গান বাদ দিয়ে কেবল অভিনয়ের কথায়ও আসি, তার অংশগুলো তিনি বেশ ভালোভাবেই করেছেন। তার নেশার কাছে মানসিক অসহায়ত্ব, কিন্তু ক্রমে গড়ে উঠা ভালোবাসার প্রতি টান, সার্ভের সময় তার সংলাপ- সব কিছুই তিনি তার মত করে ফুটিয়ে তুলছিলেন। ওয়াহিদা মল্লিক জলির মাতৃসুলভ আচরণ, শাহরিয়ার শুভ এর ইম্মেচিওর অবস্থার অভিনয় বা তার পসেসিভ ভাবনাসমূহও তিনি ফুটিয়ে তুলছিলেন সুন্দর করে। আর সকল ইম্মেচিওরিটি ঠেলে দিয়ে যখন ঘরে রাতে ফিরে আসলো সংবাদ জানাতে, তখন তার দিদির দিকে তাকিয়ে জানাতে না পারার এবং ছুটে ভিতরে ঢুকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া- এর মধ্য দিয়ে যেন তার ক্যারেক্টার ডেভেলাপমেন্ট সুন্দরভাবে সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া আরো পার্শ্ব চরিত্রে যারা ছিল তারা সকলেই ঠিকঠাক অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে পাড়ার সেই মাস্তান যার ক্যারেক্টার এর চেঞ্জ হওয়ার মধ্য দিয়ে গল্প সমাপ্তির দিকে আগায়। বোবা চরিত্রের অভিনয় ও ছিল দুর্দান্ত। 


Written and Edited By: Ankon Dey Animesh

ক্যামেরা ওয়ার্কের কথায় যদি আসি, তাহলে হ্যাঁ, ক্যামেরা ওয়ার্ক আরো ভালো হতে পারত। পুরো সিনেমা জুড়ে যে ক্যামেরা ওয়ার্ক আমি দেখলাম, তার মধ্যে প্রিমিয়াম ফিলের অভাব ছিল। যদিও সেটা নিম্ন মধ্যবিত্ত অবস্থাটাকে সুন্দর করে বুঝাতে কিছুটা সাহায্য করছে, কিন্তু তাও এর শট ডিভিশন আমার কেমন যেন লেগেছে পার্সোনালি। তবে কিছু ক্যামেরা ফ্রেম বা শট দুর্দান্ত ছিল তা বলতেই হবে। নৌকা, নদী, বা গান চলাকালীন সময়ের ফ্রেমিংগুলো অনেক ভালো ছিল। ইডিট এর ক্ষেত্রে ইডিটর ও ক্যারেক্টার এর মনের অবস্থা অনুযায়ী বেশ কিছু শেডের ইডিট করতে চেয়েছেন যা দেখতে ভালো লেগেছে। তবে ওভার অল কোয়ালিটি আরো একটু ভালো হলে হয়ত আরো ভালো লাগত। 



শেষ করতে হলে বলব, ২০১০ এ মুক্তি পাওয়া ইম্প্রেস টেলিফিল্ম এর এই অনবদ্য প্রোডাকশনটি যদি এখনো দেখে না থাকেন, তাহলে দ্রুত দেখে নিন। দারুণ গান, দারুণ পারফরম্যান্স, সুন্দর গল্প, এবং অসাধারণভাবে চরিত্রদের গ্রো করা... ইউটিউবেই সম্ভবত এভেইলেবল আছে এখন। 

Written and Edited By: Ankon Dey Animesh

Comments

  1. রিভিউ সুন্দর লেগেছে! ভুল ত্রুটিগুলোন ও উল্লেখ করেছেন! দেখতে খুব আগ্রহী!!

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

চতুর্থ মাত্রা ।। আরাফাত জুয়েল ।। দেবস্মিতা সাহা

The Curious Case of Benjamin Button ।। আরাফাত জুয়েল

ইন দা মিডল অফ "Nowhere" || আরাফাত জুয়েল