স্বর্গের নীচে মানুষ- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় || রিভিউ- তাইমুন তারিন


মানব জীবনেকাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-অহংকার-মাৎসর্য (হিংসা) কে ষড়রিপু বলে। ষড়রিপু'র মধ্যে অন্যতম রিপু হলো কাম। অন্যান্য রিপু গুলো চাইলেই আপনি কন্ট্রোল করতে পারবেন। যেমন ধরেন আপনি মনে করলেন আপনি মিথ্যা বলা ছেড়ে দিবেন আজ থেকে, আপনি চাইলেই এটা পারবেন। কিংবা ধরেন আপনি ভাবলেন, আপনি আপনার ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করবেন আজ থেকে, এটাও আপনি সহজে পারবেন। কিন্তু কাম সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এবং এর পরিনতি ভয়াবহ।




গল্পটির শুরুতে বেশ সাদামাটা-ই ছিলো। যেখানে পাহাড়ের উপর বিখ্যাত এক মন্দিরে আরোহন করতে গিয়ে ঝড় বৃষ্টির কবলে পড়ে নদীর ভয়াবহতার দরুন আটকা পড়ে যায় এক দম্পতি। তারা যে মন্দির টি তে পৌঁছাতে চেয়েছিলো, সে মন্দিরটিকে নিয়ে তথাকথিত বহু লোকগল্প প্রচলিত রয়েছে। স্থানীয় লোকের ভাষ্যমতে মন্দিরটি স্বর্গতুল্য। স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছে যায় যারা, তারা আর ফিরে আসে না- এমন অনেক লোকগল্প শুনেও স্ত্রী টি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ সেই স্বর্গ মন্দির জয়ের। যাত্রাপথে প্রচন্ড ঝড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর দরুন ফেরার পথ হয়ে যায় এবং তারা এক লোকের নিকট আশ্রয় লাভ করে।

স্ত্রী টি ছিলো ভীষণ সুন্দরী। আর আশ্রয়দাতা ছিলেন শূন্য একজন মানুষ, যে কিনা সংগ্রাম ব্যতীত জীবনের আর কোনো দিক দর্শন করে নি, সৌন্দর্য তো দূরের ব্যাপার। পাহাড়ের গহীনে আটকা পড়া এই নারীর সৌন্দর্যে সে অভিভূত হয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তাকে একবার হলেও পাওয়ার জন্য তার অসংখ্য কূটকৌশল অবলম্বন করতে হয়েছিলো। পাহাড় বেয়ে উপরের মন্দিরে পৌঁছে গিয়েও সে নারীটিকে স্পর্শ করতে পারে নি। বরং কাম বোধ তাকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শুরুতে গল্পটা নিছক একটা ভ্রমন বৃত্তান্ত মনে হচ্ছিলো। ঠিক যে মুহুর্তে গল্পের ভেতরে ডুব দিচ্ছিলাম, তখন-ই মর্মান্তিক ভাবে সমাপ্তি ঘটলো।


দুর্গম পাহাড়ের চূড়ার সেই মন্দিরকে স্বর্গ নাম দেওয়ার সার্থকতা পাওয়া যায় গল্পের শেষ পরিনতি তে। কেউ একবার স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে আর ফেরে না সহজে- ইহা-ই গল্পের মূল বক্তব্য হিসেবে ধরা দিয়েছে।

লেখনীতেঃ তাইমুন তারিন

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

চতুর্থ মাত্রা ।। আরাফাত জুয়েল ।। দেবস্মিতা সাহা

The Curious Case of Benjamin Button ।। আরাফাত জুয়েল

ইন দা মিডল অফ "Nowhere" || আরাফাত জুয়েল