Posts

চতুর্থ মাত্রা ।। আরাফাত জুয়েল ।। দেবস্মিতা সাহা

Image
  আমার বাবা সবসময়ই তার তোশকের তলায় তাঁর সিগারেটের প্যাকেট এবং দিয়াশলাই রাখেন। আমার দেড় বছর বয়সী ভাগ্নি প্রায় প্রতিদিন তার ছোট্ট দুইটা হাত দিয়ে তোশকের নিচ থেকে সে সিগারেট অথবা ম্যাচবক্স নিয়ে বাহিরে ফেলে দেয়। আমার জানা নাই সে এটা বোঝে কিনা যে সিগারেট খাওয়া কোনো ভালো জিনিস নয়, কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই এই ঘটনা রিপিট হয়। আমাদের জীবন এরকম আরও অনেক কিছুরই রিপিটেশন ঘটে, যেন আমরা একটা টাইমলুপে আটকে আছি। এই বিষয়টা, সময় নিয়ে খেলবার প্রবণতা আমাদের দেশের যে লেখকের লেখায় আমি সবচেয়ে বেশি দেখতে পেয়েছি, সে হলো শহীদুল জহির। সেই শহীদুল জহিরের ডুমুরখেকো মানুষ এবং অন্যান্য গল্প বইয়ের শেষ গল্প "চতুর্থ মাত্রা" অবলম্বনেই নুরুল আলম আতিক গড়েছেন তার "চতুর্থ মাত্রা"। একটা কাক যখন আকাশে উড়ে তখন জেনারালি সেখানে তিনটা ডিমেনশন আমাদের চোখে পড়ে। দৈর্ঘ্য (x-axis), প্রস্থ (y - axis) এবং উচ্চতা (z - axis)৷ আইনস্টাইন বলেন এখানে আরেকটা ডিমেনশনও কাজ করে, সেটা হলো ঐ কাকটা ঐ পয়েন্টে কোন সময়ে ছিল (যদিও চতুর্থ মাত্রা নিয়ে এর আগে ল্যাগ্রেং, রাইমেন, হিন্টনসহ আরও অনেকেই কাজ করেছেন) । অর্থাৎ ফোর্থ ডিমেনশন বা চতুর্থ...

সাগর লিখছেন X=Prem নিয়ে

Image
সৃজিত এমন একটা সময়ে X=Prem রিলিজ দিয়েছেন যখন কলকাতাই ইন্ডাস্ট্রি কনটেন্ট এর খরায় ভুগছে নিদারুণভাবে। সৃজিতের নিজের কাজ নিয়েও সমালোচনা কম হচ্ছে না। দ্বিতীয় পুরুষ, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি কিংবা ক'দিন আগের ফেলুদার গোয়েন্দাগিরিঃ দার্জিলিং জমজমাট; কোথাওই নামের সুবিচার করতে পারছিলেন না সৃজিত। তেমন একটা ক্রাইসিসের সময়ে তিনি বানিয়েছেন এক্স=প্রেম যেখানে একটা সাইফাই স্টোরিকে তিনি ডেভেলাপ করেছেন প্রেমের বোঝাপড়া দিয়ে। তার চেয়েও পজেটিভ ব্যাপার ছিলো নতুন এক্টর/একট্রেসদের দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানো। রোড এক্সিডেন্টে আহত হয়ে মেমরি লস হওয়া এক যুবক খিলাত এর স্পেসিফিক্যালি তার প্রেমিকা/ওয়াইফ এবং কলেজ জীবনের স্মৃতি ফিরে পাওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই এই গল্প আগাতে থাকে। পরবর্তীতে এই স্মৃতিকে ফিরে পাওয়া থেকে মেমরি ট্রান্সপ্লান্ট এর কনসেপ্টকে সামনে নিয়ে আসা হয়। মেমরি ট্রান্সপ্লান্ট এর ডিসিশান নেওয়া কিংবা গল্পের সেদিকে উৎকর্ষ আগানোর আগেই সৃজিত তার গল্প ক্যারেক্টারগুলোকে বিল্ড-আপ করেন দারুণভাবে। ফ্ল্যাশব্যাকে এই প্রেম এর বুৎপত্তি এবং পরের দিকে খিলাতের প্রেমিকা জয়ীর জন্য অর্নবের ডেসপারেটনেস আবার ট্রানপ্লা...

স্বর্গের নীচে মানুষ- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় || রিভিউ- তাইমুন তারিন

Image
মানব জীবনেকাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-অহংকার-মাৎসর্য (হিংসা) কে ষড়রিপু বলে। ষড়রিপু'র মধ্যে অন্যতম রিপু হলো কাম। অন্যান্য রিপু গুলো চাইলেই আপনি কন্ট্রোল করতে পারবেন। যেমন ধরেন আপনি মনে করলেন আপনি মিথ্যা বলা ছেড়ে দিবেন আজ থেকে, আপনি চাইলেই এটা পারবেন। কিংবা ধরেন আপনি ভাবলেন, আপনি আপনার ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করবেন আজ থেকে, এটাও আপনি সহজে পারবেন। কিন্তু কাম সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এবং এর পরিনতি ভয়াবহ। গল্পটির শুরুতে বেশ সাদামাটা-ই ছিলো। যেখানে পাহাড়ের উপর বিখ্যাত এক মন্দিরে আরোহন করতে গিয়ে ঝড় বৃষ্টির কবলে পড়ে নদীর ভয়াবহতার দরুন আটকা পড়ে যায় এক দম্পতি। তারা যে মন্দির টি তে পৌঁছাতে চেয়েছিলো, সে মন্দিরটিকে নিয়ে তথাকথিত বহু লোকগল্প প্রচলিত রয়েছে। স্থানীয় লোকের ভাষ্যমতে মন্দিরটি স্বর্গতুল্য। স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছে যায় যারা, তারা আর ফিরে আসে না- এমন অনেক লোকগল্প শুনেও স্ত্রী টি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ সেই স্বর্গ মন্দির জয়ের। যাত্রাপথে প্রচন্ড ঝড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর দরুন ফেরার পথ হয়ে যায় এবং তারা এক লোকের নিকট আশ্রয় লাভ করে। স্ত্রী টি ছিলো ভীষণ সুন্দরী। আর আশ্রয়দাতা ছিলেন শূন্য একজন মানুষ, যে কিনা সংগ্রাম ব্যতী...

মহীনের ঘোড়াগুলির আবেদন ফুরায় না!

Image
  “মহীনের ঘোড়াগুলি ঘাস খায়,কার্ত্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে " - জীবনানন্দ দাসের এক কবিতার লাইন। এই কবি নিজে যেমন তাঁর সময়ের বহু আগে চলে এসেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে, তাঁর কবিতা থেকে নাম নেওয়া “মহীনের ঘোড়াগুলি” ব্যান্ডের অবস্থাও  ছিল ঠিক তেমন। সত্তরের দশকে কলকাতার বুকে জন্ম নেয় মহীনের ঘোড়াগুলি। নাম থেকে শুরু করে সৃষ্ট গান-সবেতেই তাদের ছিলো আলাদা পরিচয় আর স্বাদ।  দুর্দান্ত সব গান নিয়ে হাজির হয়েছিলেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়, সাথে ছিল তাঁর দল।  অথচ এই ব্যান্ড কিনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো গুটিকয়েক অনুষ্ঠানের পর গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ার কারণে! সময়টা ছিলো ফিল্মি গানের যুগ। হেমন্ত, আশা ভোসলের মত শিল্পীদের গান তখন খুব চলতো। সেই ধারা থেকে সম্পুর্ণ আলাদা ছিলো মহীনের ঘোড়াগুলি। ব্যান্ডটির বিশেষত্ব হলো - তাদের সমসাময়িক অন্যান্য গানগুলোকে বলা যায় “সেই সময়ের গান”। মহীনের ঘোড়াগুলি-র গানের ব্যাপারে তা খাটে না।   বর্তমান তরুণ প্রজন্ম মোটামুটি কলেজে “মহীনের ঘোড়াগুলি” না শুনলেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কখনো না কখনো লুপে এই ব্যান্ডের গান শোনে, আড্ডা থেকে শুরু করে গ্র্যাজুয়েশন সেরেমনিতে গাওয়া হয় তাদে...

"না কমলা না মেহেরজান" কে আমি ব্যক্তিগত দিক থেকে যেভাবে দেখি || Ankon Dey Animesh || Nurul Alam Atique || Joya Ahsan || Ahmed Rubel

Image
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "মুসলমানির গল্প" অবলম্বনে নির্মিত নাটক "না কমলা, না মেহেরজান" বেশ কিছু কারণে আমার মনে অনেক দিন বিরাজ করবে। পরিচালক নুরুল আলম আতিক গল্পের প্রেক্ষাপট সময়েই নাটকটির টাইমলাইন বানিয়েছেন। সম্ভবত এই গল্প নিয়ে কাজটা করতে তিনি স্পেসিফিক্যালি উৎসুক ছিলেন, সেসব নিয়ে আলাপ একটু পরেই দিচ্ছি!  Written and Edited by:  Ankon Dey Animesh এই কাজটাকে আমি আর কিছুর জন্য মনে না রাখলেও এর মিউজিক টিমের জন্য মনে রাখব। বা পুরো মিউজিক কম্পোজিশন বাদ দিলেও শেষের "প্রেম নগর কা অন্ত না পায়া" এর জন্য মনে রাখব। কবির সাধুর এই কবিতাকে শুরুতে সাহানা দত্তগুপ্তার নিকট শুনেছিলাম আমি। তিনি কবিরের বেশ কিছু কবিতাকে ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যালের ১০টি ঠাটে ফেলে এলবাম বের করছিলেন, এবং এই কবিতাকে সম্ভবত ইমন রাগেই তৈরী করেছিল তারা। কিন্তু "না কমলা, না মেহেরজানে" ভৈরব বা ভৈরবীতেই (বা তৌড়ী) তৈরি করা হয়েছিল বলে মনে হয়। তবে যেই ঠাটেই করুক নাহ কেন, আমার অসাধারণ লেগেছে। পুরো কাজের শেষে যখন এই কম্পোজিশন আমার কানে আসলো, আমি বিভোর হয়ে গেলাম এক অন্যরকম স্বপ্নে! শেষের দিকের এই কম্পোজিশন পুরো...